শিক্ষা বিস্তারের মাপকাঠি হিসেবে মানুষকেই প্রথম উপাদান মনে করেছেন অনেক মনীষীগণ। Man is measure of all things. শিক্ষাই সমস্ত গুণের আধার এবং শিক্ষাই মানুষকে জ্ঞানার্জনে সাহায্য করে। শিক্ষার দ্বারাই মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধিত হয়। আমাদের দেশে শিক্ষার উদ্দেশ্য চারটি-জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভংগির পরিবর্তন এবং তথ্য-প্রযুক্তির জ্ঞান। উপযুক্ত জ্ঞানার্জনের জন্য চাই উপযুক্ত শিক্ষাদান। শিক্ষাদানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করা। আর এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের পূর্বশর্ত হল যথোপযুক্ত শিক্ষক-প্রশিক্ষণ। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্ঞানের সমন্বয় সাধন, উন্নতি ও সঠিক পন্থায় তা বিতরণের জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। শিক্ষক প্রশিক্ষণের এই গুরু দায়িত্ব নিতে ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, খুলনা।
মোট ৭.২৫ একর জায়গা নিয়ে খুলনা জেলার আড়ংঘাটা থানার অন্তর্গত খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কুয়েট রোডের পশ্চিম পাশে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। ক্যাম্পাসে রয়েছে একটা বিশাল বড় খেলার মাঠ, তিন তলা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, একটি দোতলা মসজিদ, বঙ্গবন্ধু নামে ছেলেদের একটি দোতলা এক্সটেনশনসহ তিনতলা হোস্টেল, শেখ রাসেল নামে আরও একটি তিন তলা হোস্টেল এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা নামে মেয়েদের জন্য একটি তিন তলা হোস্টেল। ছেলে ও মেয়েদের হোস্টেলে একই সাথে প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারে। এখানে আরও রয়েছে “সুন্দরবন” নামে একটি সুন্দর গেস্ট হাউজ। এই গেস্ট হাউজে আধুনিক কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এই কলেজে বি. এড. কোর্স চালু ছিল। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বি. এড. ডিগ্রী প্রত্যাশি শিক্ষকগণ এক বছরের জন্য এখানে প্রশিক্ষণে আসেন। বি. এড. শ্রেণিতে প্রতি বছর মোট ৬০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। উচ্চ শিক্ষার জন্য এই কলেজে এক বছর মেয়াদী মাস্টার্স (এম. এড.) কোর্স চালু আছে। এই কোর্সের আসন সংখ্যা ১০০। এই মাস্টার্স (এম. এড.) কোর্সটি বাংলাদেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন বিষয়ের মাস্টার্স কোর্সের সমমানের। ২০১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। এতে আসন সংখ্যা ৫০। ভর্তির যোগ্যতা যে কোন ডিসিপ্লিন থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ। এখান থেকে অনার্স বা/ও মাস্টার্স পাশ করলে শিক্ষার্থীরা বিসিএসসহ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, শিক্ষা অফিস, ব্যাংক, বীমায় চাকুরি করার যোগ্যতা অর্জন করে। আবার সরাসরি এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রী করারও পথ উন্মুক্ত থাকে। বিদেশি যে কোন শিক্ষা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানে বা বিদেশেও রয়েছে অপার সুযোগ। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে- বিএড অনার্স শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় মেধা তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই কলেজে মোট ৩১ জন দেশ-বিদেশের উচ্চ শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ও অধ্যাপক রয়েছে। এদের শ্রেণি পাঠদান শিক্ষার্থীদের অনেক সমৃদ্ধ করে তুলছে। এই উচ্চ শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-অধ্যাপকগণ সেরা প্রযুক্তি এবং সর্বোচ্চ মানের নিশ্চয়তা দিয়ে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
এরপর এই কলেজ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষকদের স্বল্প কালীন যেমন: সিপিডি, আইসিটি, অটিজম, এসটিসি প্রভৃতি প্রশিক্ষণদানে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। প্রশিক্ষণদানে তথা শ্রেণি পাঠদানের জন্য কলেজের প্রত্যেকটি কক্ষই মাল্টিমিডিয়া যুক্ত। এছাড়াও পুরো কলেজ রয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস